কারি পাতা চেনার উপায় - কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম

 আজকের আর্টিকেলে আমরা কারি পাতা চেনার উপায়, কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো। আপনি যদি কারি পাতা চেনার উপায় ও কারি পাতা খাওয়ার নিয়মসহ কারি পাতার আরও অন্যান্য জরুরি বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আপনাকে আজকের এই সম্পন্ন আর্টিকেলটি মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

কারি পাতা চেনার উপায় - কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই কারি পাতার নাম শুনেছি আবার অনেকেই এই পাতা ব্যবহার করে থাকি। তবে আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা সঠিকভাবে কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম জানে না। আবার অনেকেই হয়তো কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে জানে না। আপনিও যদি এ বিষয়ে সঠিক তথ্য না থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জেনে যাবেন। তো চলুন বিস্তারিত শুরু যাক।

কারি পাতা চেনার উপায়

কারি পাতা সাধারনত রান্নার রুচি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এ পাতার অনেক স্বাস্থ উপকারী গুন থাকার কারনে অনেকেই এ পাতা খেতে চাই। অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে নিম পাতা আর কারি পাতা নাকি একই রকম। কিন্তু আসলে এটি পুরোটাই ভুল ধারণা। 

নিম পাতা ও কারি পাতা দেখতে একই রকম নয়। একই নয়। তবে নিম পাতার সাথে কারি পাতার কিছুটা মিল রয়েছে। নিম পাতা স্বাদে তেতো কিন্তু কারি পাতা স্বাদে মিষ্টি ও এর সামা্ন্য ঝাঁঝালো গন্ধ রয়েছে। 

কারি গাছের উচ্চতা মাঝারি, প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিটার উঁচু হয়ে থাকে। কারি পাতার আকার অনেকটাই নিম পাতার মতোই, তবে কারি পাতা নিম পাতার চেয়ে অনেকটা ছোট ও ঘন হয়ে থাকে। আবার এর ফুল দেখতে সাদা হয় এবং ফল দেখতে কিছুটা নিম ফলের মতোই দেখতে। 

কারি পাতার উপকারিতা

কারি পাতা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে সহায়ক। তো আপনি কি কারি পাতার উপকারিতা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আমাদের পোষ্টের এই অংশ টুকু মনযোগ দিয়ে পড়েঈর উপকারিতাগুলো জেনে নিন। 
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: কারি পাতার মধ্যে রয়েছে অনেক বেশি ভিটামিন এ যার ফলে আপনি যদি নিয়মিত কারি পাতা সঠিক নিয়ম অনুযায়ী খান তাহলে আপনার চোখের স্বাস্থকে ভালো রাখবে।

ত্বকের স্বাস্থ ভালো রাখে: এই পাতায় ভিটামিন ই বিদ্যমান থাকায় ত্বকের ব্রন ও পিম্পল দূ করতে সহায়তা করে এবং এর পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ ভালো রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কারি পাতাতে প্রচূর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তাই আপনি যদি এই পাতা নিয়মিত গ্রহণ করেন তাহলে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

ক্ষতস্থানের ক্ষত সারায়: কারি পাতা অ্যান্টিসেপ্টিকের ন্যায় কাজ করে থাকে। তাই কোনো কাটা স্থানে কারি পাতা বেটে লাগালে ক্ষত স্থান দ্রুত সেরে উঠে।

ওজন কমায়: কারি পাতা অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে আনে। কারি পাতা রস করে নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ওজনকে কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রনে আনতে সহায়তা করে থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে: কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ফেনলস, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

শারিরিক সুস্থতায় কারি পাতা দারুন উপকারী। তাই উপরের রোগগুলো প্রতিরোধ করতে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত খেতে পারেন কারি পাতার রস।

কারি পাতার অপকারিতা

স্বাস্থ সুরক্ষায় কারি পাতা খুবই উপকারি, তা আমরা জেনে গেছি। তবে এ পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। এ পাতা উপকারি বলে, যতটুকু ইচ্ছা এ পাতা খাওয়া ঠিক নয়। এই পাতা পরিমানে বেশি খেলে আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকারক। তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে কি কি অপকারিতা দেখা দিতে পারে তা জেনে নেওয়া যাক। 

এসিডিটি: পরিমিত কারি পাতা খাওয়া এসিডির সমস্যার সমাধান করে থাকে। তবে অতিরিক্ত এ পাতা খেলে এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়।

পেটে ব্যাথা: অতিরিক্ত কারি পাতা খেলে পেটে ব্যাথা হতে পারে। কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ফাইবার, যার ফলে অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে পেটে ব্যাথার সমস্যা হয়ে থাকে।

রক্ত জমাট বাধার সমস্যা করে: আপনার যদি রক্ত জমাট বাধার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে এ পাতা খাওয়া আপনার জন্য ক্ষতিকারক। কারি পাতায় থাকা কুমারিন এ সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।

গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর: গর্ভবতী মায়ের কারি পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ন। কারি পাতার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতের ও অকাল প্রসবের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, কারি পাতা স্বাস্থের জন্য উপকারি। তবে এ পাতা খেতে হবে পরিমিত। কারন অতিরিক্ত কারি পাতা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আপনার স্বাস্থ সুরক্ষায় কারি পাতা পরিমিত এবং সঠিক সময়, সঠিক নিয়মে খেতে হবে।

কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম

কারি পাতা শরীরের জন্য উপকারি একটি ভেষজ উপাদান। এ পাতার রয়েছে একাধিক গুন। তাই চিকিৎসকেরা এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো কারি পাতার উপকার পেতে, এ পাতা খাওয়ার নিয়ম কি। কোন কোন নিয়মে কারি পাতা খাওয়া স্বাস্থের জন্য উপকারী অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। তো চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

১. স্বাস্থ উপকারিতা পেতে কয়েকটি কচি কারি পাতা প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে শুধু পানিটুকু ছেঁকে পান করুন। এ নিয়মে কারি পাতা খেলে ইমিউনিটি বাড়বে, কোলেস্টেরল ঠিক থাকবে, পেটের সমস্যা কমবে, দুশ্চিন্তা কমবে এবং বিভিন্ন রোগ দূরে যাবে।

২. আপনি যদি কারি পাতার উপকা্রিতা পেতে চান, তাহলে আপনাকে ৬/৭ টার মত কচি পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে চিবিয়ে খেতে হবে। তাহলে দেহের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করবে, হজম শক্তি আগের চেয়ে উন্নত হবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং এর পাশাপাশি দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দূর করবে।

৩. কারি পাতা পরিমানমতো জলের সাথে দিয়ে সেদ্ধ করে, ছেঁকে নিন। এরপর পানি ঠান্ডা হলে সে পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খাবেন বিভিন্ন উপকার পাবেন।

৪. বিভিন্ন রান্নায় কারি পাতা  ব্যবহার করতে পারেন। এ পাতা শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না, বরং এ থেকে বেশ কিছু স্বাস্থ উপকারিতাও পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে এ পাতা শাকসবজি, ওটসের সাথে যোগ করে এবং সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।

যারা কারি পাতা খেতে চাইছেন, তারা স্বাস্থের সঠিক উপকার পেতে উপরের নিয়মগুলো ফলো করে কারি পাতা খাবেন। সঠিক নিয়মে কারি পাতা খান, আপনার শরীরে কারিপতার উপস্থিতি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করবে বলে আশা করা যায়।

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

আপনি যদি আপনার চুলের সঠিক যত্ন নিতে চান তাহলে কারি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কারি পাতা চুলের যত্নে অনেক উপকারি ভূমিকা পালন করে থাকে। কারি পাতা চুলের যত্নে কি কি উপকার করে এবং কিভাবে এ পাতা ব্যবহার করতে হয় অনেকের সঠিক নিয়ম জানা নেই। তো চলুন জেনে নিন চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।ক
  • মেথি, আমলকি ও কারি পাতা একসাথে তিনটি উপাদান পরিমাণমতো নিয়ে একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর মিশ্রনটি চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • কারি পাতার সাথে টকদাই একসাথে মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এরপর মিশ্রনটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে নিন। মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং চুল হবে ঝলমলে।
  • কারি পাতা ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে তা নারিকেলের তেলের সাথে মিশিয়ে চুলায় ফুটিয়ে, ঠান্ডা হয়ে গেলে তা চুলে ও স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। এ পদ্ধতিতে নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে।
  • কারি পাতা ও পেঁয়াজ দুটি উপাদান একসাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর সেটা চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে ১ ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে নিন। চুল পড়া কমবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
  • কারি পাতা ব্লেন্ড করে তার সাথে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে ভালোভাবে মিশ্রন তৈরি করে নিন। এরপর মিশ্রনটি ভালোভাবে চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। নতুন চুল গজাতে এ পদ্ধতি অনেক উপকারী
কারি পাতার মধ্যে থাকা গুনাগুন আপনার চুলের স্বাস্থকে ভালো রাখতে সহায়তা করবে। তাই চুলের যত্ন নিতে কারি পাতা উপরের নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন। এছারাও চুলের স্বাস্থ ভালো রাখতে বেছে নিতে পারেন কারি পাতার তেল।

কারি পাতা সম্পর্কে লেখকের মতামত

আমরা ইতিমধ্যে কারি পাতা চেনার উপায় ও কারি পাতা খাওয়ার নিয়মসহ কারি পাতা সম্পর্কে আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা হয়তো এতক্ষণে সম্পূর্ণ ব্লগ পোষ্টটি পড়ে কারি পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন। তবে কারি পাতা নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আমাদের আজকের কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কিত পোষ্ট ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে তারাও কারি পাতা চেনার উপায় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে উপকারে আসবে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমন আরও জরুরি আর্টিকেল পড়তে হলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধ্যনবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url